ভাষা বদলি করুন

The Only way to stop any pain in your life is to accept the fact that nothing is yours, nothing was yours, and nothing will ever be yours. They are worldly attachments; given by Allah, belonging to Allah and returning beck to Allah.

May 31, 2016

পারস্যের কবি শেখ সাদী এর একটি শিক্ষামূলক গল

পারস্যের কবি শেখ সাদী এর একটি শিক্ষামূলক গল্প ... পড়ে দেখুন ভালো লাগবে
এক রাজার ছিল কয়েকটি ছেলে। তাদের মধ্যে একটি ছিল দেখতে যেমন কালো, আকারেও তেমনি বেঁটে। বাকি কয়জন ছিল স্বাস্থ্যবান ও সুশ্রী।
একবার তার বাপ কালো ছেলেটির দিকে ঘৃণা ও তাচ্ছিল্যের নজরে তাকালেন।
ছেলেটি ছিল বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান। সে তার প্রজ্ঞার আলোকে বাপের এই বক্রদৃষ্টির তাৎপর্য বুঝতে পেরে বললো :
আব্বা! জ্ঞানী বেঁটে-জ্ঞানহীন বিরাট বপু স্বাস্থ্যবানদের চেয়েও মর্যাদায় উত্তম। আকারে যা বড়, দামে তা অনেক সময় নি¤œই হয়ে থাকে। ছাগল দেখতে ছোট হলেও তার গোশত হালাল এবং খেতে ভারি মজা। কিন্তু হাতি আকারে বড় অথচ তার গোশত অখাদ্য। এ কথা কি শোনেননি আব্বা! যে, এক দুর্বল জ্ঞানী এক মোটাতাজা আহাম্মককে বলেছিল : ‘আরব দেশের ঘোড়া যদি কাবু এবং দুর্বলও হয়, তবুও তার একটা ঘোড়া একপাল গাধার চেয়ে উত্তম!’
ছেলের এই জ্ঞানমূলক কথা শুনে বাপ একটু হাসলেন। সভাসদগণ কথাটা যুক্তিযুক্ত বলে সমর্থন করলেন।
কিন্তু তার অন্য ভায়েরা মনে মনে খুব ব্যথিত হলো।
সেই রাজার এক প্রবল শত্রু ছিল।
সে রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বসলো।
যুদ্ধের প্রস্তুতি নেবার অবসর ছিল না। অগত্যা তার সৈন্যসামন্ত যা ছিল, তাই নিয়ে অগ্রসর হলেন।
উভয়পক্ষের সেনাবাহিনী মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত।
শত্রুসৈন্য এদের চাইতে সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল।
যুদ্ধে জয়লাভের আশা নেই ভেবে এ পক্ষের একদল সৈন্য যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালাবার সুযোগ খুঁজছিল।
এমনি নাজুক মুহূর্তে সর্বপ্রথমে ময়দানে অবতীর্ণ হলো সেই খর্বাকৃতির কালো হ্যাংলা- পাতলা শাহজাদা। গুরুগম্ভীর কন্ঠে হুঙ্কার ছেড়ে বললো :
‘আমি এমন কাপুরুষ নই যে, দেহে শেষ রক্তবিন্দু থাকতে যুদ্ধের ময়দানে পিঠ দেখাবো! জেনে রেখ আমি সেই বীর- যে সম্মুখ সমরে জীবন বিলিয়ে দেবে, তবু দেশের স্বাধীনতা এবং মর্যাদা এতটুকু ক্ষুন্ন হতে দেবে না।
সত্যিকার অর্থে বীর পুরুষ ঐ ব্যক্তি, যে যুদ্ধের মাঠে নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়। ভয়ে পালিয়ে অন্য সৈনিকদের মনোবল নষ্ট করে না।’
এই কথা বলেই সে শত্রুবাহিনীর ওপর সাহসের সাথে তীব্র বেগে ঝঁপিয়ে পড়লো এবং কী আশ্চর্য! চোখের নিমেষেই বিপক্ষের কয়েকজন বিশিষ্ট সামরিক কর্মচারীকে নিহত করে ফেললো।
এরপর সে পলায়নপর সৈনিকদের উদ্দেশে উদাত্ত কণ্ঠে বললো :
‘হে দেশপ্রেমিক নওজোয়ানগণ! বীর পুরুষের মতো সামনে অগ্রসর হও। মেয়েদের মত ভয়ে জড়োসড় হয়ো না। পরাধীন হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌম রক্ষার জন্য সম্মুখ সমরে শাহাদাত বরণ করা শতগুণে শ্রেয়।’
তার এই উত্তেজনাপূর্ণ ভাষণ শুনে সৈন্যদের মনোবল দ্বিগুণ বেড়ে গেল। তারপর সকলে একযোগে শত্রুবাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। যুদ্ধের গতি ফিরে গেল এবং শত্রুপক্ষ সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হলো।
যুদ্ধ শেষে বিজয়ী বেশে শাহজাদা বাপের দরবারে ফিরে এলো এবং সিংহাসন চুম্বন করে বলল : অবয়বে আমি হতে পারি ছোট
বীরত্বে বড় তবু/ বিরাট বপুরা বড় হবে শুধু/ এমন হয় না কভু॥/ যুদ্ধের মাঠে ঘোড়া দরকার/ যদিও তা হয় কৃশ/ কাজে নাহি আসে থাকিলে গোহালে/ মোটা তাজা শত বৃষ॥
বাদশাহ এবার আদর করে তাকে কোলে তুলে নিলেন এবং চুমো খেয়ে তাকে অশেষ ধন্যবাদ দিলেন।
এই ঘটনার পর থেকে তার ওপর বাপের আদর  স্নেহ দিন দিন বাড়তে লাগলো। এমনকি সেই বেঁটে শাহজাদাকেই পরবর্তীতে সিংহাসনের ভাবি উত্তরাধিকারী সাব্যস্ত করা হলো।
বাদশার এই সিদ্ধান্তে তার অন্য ছেলেরা হিংসার আগুনে জ্বলে পুড়ে মরতে লাগলো। কিন্তু তাদের করার কিছুই ছিল না। তাই নিরুপায় হয়ে তারা ঐ ভাইকে দুনিয়ার বুক থেকে সরিয়ে দেবার মতলব আঁটতে উঠে পড়ে লেগে গেল।
সুযোগ মতো একদিন তারা খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে দিল।
ঘটনাক্রমে তাদের বোন জানালার ফাঁক দিয়ে সবকিছু দেখে ফেললো।
বোনটিও ভাইয়ের মতো তীক্ষè বুদ্ধিমতী ও খুব হুঁশিয়ার ছিল। তাই যখনই শাহজাদার সামনে খাবার হাজির করা হলো, ঠিক সেই মুহূর্তে বোন তার জানালার কপাট ঠাস করে বন্ধ করে দিল।
বোনের এই ব্যবহারে ভাইয়ের মনে কেমন যেন খটকা লাগলো। সে তখন নিজের দিব্যজ্ঞানের আলোকে সকল রহস্য অনুধাবন করে নিলো। সেই খাবার আর খেলো না। বরং বললো : জ্ঞানীগুণীরা সব মরে যাবে, আর নির্গুণ অপদার্থের দল তাদের জায়গা দখল করে বসবে-এটা অসম্ভব!
বাপকে ব্যাপারটি জানানো হলো।
বাপ অপরাধীদেরকে ডেকে যথেষ্ট তিরস্কার করলেন এবং যথোপযুক্ত শাস্তি দিলেন। ভবিষ্যতে যাতে ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া বিবাদ না হয়, সেই জন্য দূরদর্শী বাদশা তাঁর রাজত্বকে কয়েকটা প্রদেশে ভাগ করে প্রত্যেক পুত্রকে তার পছন্দমত প্রদেশের কর্তৃত্ব দিলেন।
কথায় বলে : দশ জন দরবেশ এক চাদরের নিচে ঘুমুতে পারে কিন্তু দু’জন রাজা একটা বিরাট রাজ্যেও বাস করতে পারে না!
আধখানা রুটি পেলে খোদাভীরুজনে
সবে মিলে ভাগ করে খায় খুশি মনে॥
রাজা যদি সপ্তরাজ্য অধিকারও করে
তবু তার অন্য রাজ্য জয়ের লালা ঝরে॥

No comments:

Popular Posts