উত্তর পূর্ব ভারতের প্রাণপুরুষ বরাকের রুপকার প্রয়াত মইনুল হক চৌধুরী বর্তমান শিলচর জেলার সোনাবাড়ী ঘাটে ১৯২৩ সালের ২৩মে জন্ম গ্রহণ করেন। মইনুল হক চৌধুরী আসামের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক চিরস্মরণীয় নাম। আসাম মন্ত্রী সভায় প্রভাবশালী মন্ত্রী ছিলেন। নয়টা দপ্তর একসঙ্গে নিষ্ঠার সাথে চালিয়ে গেছেন। ইন্ধিরা গান্ধীর মন্ত্রী সভায় কেবিনেট মন্ত্রী ছিলেন।
প্রয়াত হক বাল্যশিক্ষা গ্রহণ করেন সোনাবাড়িঘাট এম, ভি, স্কুলে। ১৯৩৩ সালে শিলচর সরকারি স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৪০ সালে ১ম বিভাগে মেধাবৃত্তি সহ ম্যাট্রিক পাশ করেন। সিলেট মুরারীচাঁদ কলেজে ভর্তি হয়ে পড়া শেষ করে চলে আসেন গুয়াহাটী কটন কলেজে। ১৯৪২ সালে আই এ পরীক্ষা পাশ করেন প্রথম বিভাগে। প্রয়াত ভূপেন হাজেরিকা ছিলেন মইনুল হকের কলেজ বন্ধু। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন ১৯৪২ সালে। বি এ পাশ করেন। ১৯৪৪ সালে ইতিহাস নিয়ে এম এ এবং আইনে স্নাতকে ভর্তি হন। উভয় পরীক্ষা একসঙ্গে ১৯৪৬ সালে ১ম বিভাগে পাশ করেন।
মইনুল হক চৌধুরী এক অবিসংবাদী নেতা ছিলেন। তার কর্মক্ষেত্র সারা ভারত পরিব্যপ্ত। তাঁর উজ্বল ব্যক্তিত্ব, কর্মদক্ষতা ও সুযোগ্য নেতৃত্ব সমস্ত ভারতে বিরল। ১৯৫০ সালে শিলচর মধুরবন্দ ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হয়ে শিলচর মিউনিসিপাল বোর্ডের সদস্য হন। ১৯৫২ সালে বিরাট ভোটের ব্যবধানে সোনাই বিধান সভা কেন্দ্র থেকে তিনি বিধায়ক হন। ১৯৫৭ সালেও আবার নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে বিষ্ণুরাম মেধির মন্ত্রীসভায় কৃষিমন্ত্রী হন। ১৯৬২ সালে আবার মন্ত্রী হলেন বিমলা প্রসাদ চালিহার মন্ত্রী সভায়, বন্যা নিয়ন্ত্রণ সহ নয়টা দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। হেম চক্রবর্তীকে টপকে মইনুল হক চৌধুরী মন্ত্রী হন। তার সময়ে মন্ত্রীরা ছিলেন ফকর উদ্দিন আলী আহমদ, দেবকান্ত বড়ুয়া, মহেন্দ্র মোহন চৌধুরী, কামাখ্যা প্রসাদ ত্রিপাটি।
তিনি মন্ত্রী থাকাকালে কাছাড়ে কৃষিক্ষেত্রে প্যাকেজ প্রোগ্রাম চালু করে কৃষকদের দুঃখ-দুদর্শার অবসান ঘটান, ই আণ্ডডি-র বাঁধ প্রকল্প চালু করেন।
কাছাড়কে বন্যামুক্ত করতে ও সস্তায় জল বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বরাক ড্রাম প্রকল্প দিল্লির সেচ দফতরে প্রদান করেন। এ প্রকল্পের জনক মইনুল হক চৌধুরী।
মইনুল হক ছিলেন একজন রাষ্ট্রনেতা, দুরদর্শী ও দেশপ্রেমী নেতা। ১৯৭১ সালে ধুবড়ী লোকসভা আসন থেকে সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত হন।
এস ইউ সি আই এর জাহান উদ্দিনকে বিপুল ভোটে হারিয়ে অজানা-অচেনা অপরিচিত জয়গায় জিতলেন। প্রথমবার সাংসদ হয়ে ইন্দিরা গান্ধী মন্ত্রী সভায় শিল্পোন্নয়ন মন্ত্রী হন। যোগ্যতা অনুসারে ভারিশিল্পে বরাক ভূমিতে চরগোলায় চিনিকল, শিলচরে রেডিও সেন্টার, দুরদর্শন কেন্দ্র, গুয়াহাটি জাগীরোডে কাগজ কল, হাইলাকান্দির পাঁচগ্রামে কাগজকল (এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম কাগজকল) সবাই কর্মকাণ্ড মইনুল হকের।
মইনুল হক চৌধুরীর প্রচেষ্টায় শিলচরে যখন আর, ই, সি, (বর্তমানে নিট) প্রতিষ্টা হয় তখন সমগ্র ভারতে এ ধরণের প্রতিষ্ঠান মাত্র ১৬টা ছিল। শিলচরে পলিটেকনিক স্থাপন করেছিলেন তিনি। এ থেকে অনুভব করা যায় যে করাগরী শিক্ষার ক্ষেত্রে এই অঞ্চলকে তিনি কতটা এগিয়ে যাবার সুযোগ করে দিয়েছেন।
শিলচর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়, শিলচর মেডিক্যাল কলেজ, শিলচরে আসাম ইউনিভার্সিটি, ঘুংঘুরে পশুচিকিৎসা স্কুল তাঁরই অবদান, টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের প্রথম প্রস্তাব মইনুল হকের।
মইনুল হক চৌধুরী ১৯৬১ সালে রাষ্ট্রসংঘে ভারতীয় প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি হজ্জ করেন।
শ্রীলংকা, কুয়েত, ইরান, মালয়েশিয়া, মিশর, দক্ষিন আফ্রিকা, আফগানিস্থান, গ্রীস, সিঙ্গাপুর, থাইল্যাণ্ড, ব্রিটেন, ইতালি, আমেরিকা ও রাশিয়া ইত্যাদি দেশে ভারত সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন মইনুল হক চৌধুরী।
১৯৭৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী দিল্লীর এইমসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই মহান নেতার মৃত্যুতে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে।।
ইন্টারনেট তেকে সংগ্রহীত
No comments:
Post a Comment