ভাষা বদলি করুন

The Only way to stop any pain in your life is to accept the fact that nothing is yours, nothing was yours, and nothing will ever be yours. They are worldly attachments; given by Allah, belonging to Allah and returning beck to Allah.

November 05, 2019

গরুর মূল্য যেখানে মানুষের চেয়ে বেশি!

।।জাকারিয়া ইছলাম।।


আমাদের দেশে গরুকে হাতিয়ার বানিয়ে যেভাবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির শুরু হয়েছে, সেটার বলি হচ্ছেন শত শত নিরপরাধ মুসলিম। এই রাজনীতি হয়তো কোনদিনই শেষ হবে না, মানুষও মুক্তি পাবে না গরুর নামে হওয়া এসব সহিংসতার হাত থেকে, গত ছয় বছরে আমাদের দেশে অগ্নিকাণ্ড, রেল দুর্ঘটনা, বন্যা বা জঙ্গী হামলায় যতো মানুষ মারা যায়নি, তারচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে গো-রক্ষকদের নৃশংস হামলার শিকার হয়ে। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির সরকার ইলেকশন ম্যানিফেস্টোতে দুই কোটি চাকরি দেয়ার কথা ছিল। সেটা বাস্তবে হয়নি, তবে দেশজুড়ে লাখ লাখ গো-রক্ষক সন্ত্রাসী যে গড়ে ঊঠেছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। এরা ধর্মের নাম করে মানুষ মারে, গরুকে রক্ষার নাম করে অন্য মুসলমানদের ওপর অত্যাচার চালায়। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে, এসব ঘটনার বেশির ভাগেরই কোন বিচার হয় নাই!

গো-রক্ষার নামে শতকরা ৯৭ ভাগ গণপিটুনি এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর৷ উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডে গোরক্ষার নামে চলেছে একের পর এক হামলা এবং মানুষ খুন৷ কিশোর থেকে বৃদ্ধ, রেহাই পাচ্ছে না কেউই। গো-রক্ষকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়া এক ব্যক্তির লাশ পড়ে ছিল তার বাড়ির উঠোনে, পুলিশ এসে লাশের কোন ব্যবস্থা না করে ফ্রিজ খুলে সেখানে থাকা মাংস জব্দ করে নিয়ে গেছে- এমন ঘটনার পরে এই সহিংসতা থামবে কি করে বলুন?
এমন নয় যে একদল উন্মাদ মিলেই এই হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে দেশজুড়ে। এদের পেছনে রাজনৈতিক আর ধর্মীয় সাহায্য আছে। গো-রক্ষক সমিতি গঠণ করা হয়েছে, দেশের প্রায় প্রতিটা রাজ্যে আছে এর শাখা। কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদেরাও এদের আশকারা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, সেকারণেই দিনকে দিন এরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে গরু জবাই করা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে কর্ণাঠক ছাড়া, এমনকি মুসলমানদের ডেইরি ফার্ম চালানোর অনুমতিও দেয়া হচ্ছে না বর্থমানে।
তার ওপরে হাস্যকর রকমের কার্যকলাপ তো আছেই। উত্তপ্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তার দিন শুরু করেন গরুকে খাইয়ে, উত্তপ্রদেশের গরু জবাই করা হলে ঘরে ঘরে আগুন জ্বলে উঠবে বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে গরুর নামে চেয়ার স্থাপন করা হয়, দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী বলেন, গরুর মূত্র থেকে ক্যান্সারের প্রতিষেধক আবিস্কারের ফর্মূলা নিয়ে কাজ করছে বিজ্ঞানীরা, আরেক বিজেপি সাংসদ স্বাধ্বী প্রজ্ঞা তো শপথ করেই বলেন, গরুর মূত্র পান করেই নাকি তার ক্যান্সার ভালো হয়ে গেছে! আমাদের দেশে গরুর এমন কদর যেহেতু গরুরা নিজেদের ভি-আই-পি ভাবতেই পারে, তাতে দোষের কিছু নেই।
এই গরু রক্ষার নাম করেই মুসলমানদের ওপর চালানো হচ্ছে বর্বর নির্যাতন, সেসব দেখার কেউ নেই। গরুর মাংস বিক্রির অভিযোগে গতবছর  আমাদের আসামে এক মুসলমান ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল। পরে ফরেনসিক রিপোর্টে জানা যায়, তার কাছে থাকা মাংসগুলো ছিল ছাগলের মাংস। প্রতিমাসে পুরো দেশে গড়ে একশো মানুষের মৃত্যু হচ্ছে শুধুমাত্র গো-রক্ষকদের নির্যাতনে। নরেন্দ্র মোদি বাধ্য হয়ে একবার গো-রক্ষার নামে মানুষ হত্যা করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন, তার পরদিনই উত্তরপ্রদেশে পিটিয়ে হত্যা করা হয় এক মুসলমানকে, গরুর মাংস বিক্রির অভিযোগে!
হরিয়ানার বল্লভগড়ের কাছে ট্রেনে জুনাইদ খান ১৫ বছরের কিশোরকে হত্যা করা হয়েছিল। গোমাংস খাওয়া এবং গোহত্যা নিয়ে তর্কের জেরে জুনাইদকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ দিল্লিতে লরি করে গরু নিয়ে যাওয়ার সময় সাতজন শ্রমিক গোরক্ষকদের হাতে গণপিটুনির শিকার হয়৷ পেটানোর পরে হাত-পা বেঁধে তাদের ফেলে রাখা হয় প্রায় চব্বিশ ঘন্টা।
ঝাড়খণ্ডের রাঁচির কাছে আলিমউদ্দিন আনসারি নামে একজন গরু ব্যবসায়ী গণপিটুনিতে প্রাণ হারান৷ তার ক’দিন বাদেই এক ডেইরি ফার্মের মালিকের ওপর শ-খানেক লোক চড়াও হয়, মারধর করে এবং তার ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়৷ কারণ? তার ঘরের কাছে পড়েছিল একটা মরা গরু৷ পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরে তিনজন নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে খুন করা হয়৷ অভিযোগ, তারা নাকি গরু চুরি করে পাচার করছিল৷
আমাদের আসামের আবু হানিফা এবং রিজাউদ্দিন আলি গণপিটুনিতে নিহত হয়৷ সন্দেহ, তারা নাকি গরু চুরি ও পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল৷ রাজস্থানের আলওয়ারে ৫৫ বছর বয়সি পেহলু খানকে গরু পাচারকারী অপবাদ দিয়ে এমনভাবে মারধর করা হয় যে, দু’দিন পর হাসপাতালে মারা যায় সে৷ হিন্দু মৌলবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনের পক্ষ থেকে পেহলু খানের হত্যাকারীকে বাহাবা দিয়ে টুইটও করা হয়েছিল তখন। এরকম ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে, এখন তো মিডিয়াও আর এসবে আগ্রহ দেখায় না, যেন ডালভাত হয়ে গেছে এসব!

যে দেশে পশুর মূল্য মানুষের চেয়ে বেশি, যে দেশে পশুকে বাঁচানোর নাম করে অকাতরে মানুষ হত্যা করা হয়, যে দেশের পুলিশ এসে নিহতের লাশের সদ্গতি না করে ফ্রিজ থেকে মাংসের স্যাম্পল নিয়ে যায়, সেই ই হচ্ছে আমাদের মহান দেশ,  সেই দেশের রাজনৈতিক অবস্থা আর আইনশৃঙখলা ব্যবস্থার দিকে আঙুল তোলাটাই স্বাভাবিক।

No comments:

Popular Posts