জীবনের লক্ষ্যের দিকে ভ্রমণ করতে চাইলে যা যা প্রয়োজন তার মধ্যে সচরাচর প্রেরণাকেই আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব’লে মনে করি। কিন্তু আসল বিষয়টি তা নয়। আপনি আমি নিশ্চয়ই এমন অনেকের কথা জানি যাদের প্রেরণা দেয়ার লোকের অভাব নেই, কিন্তু তারা অত্যধিক প্রেরণায় বিরক্ত হন। এমনও অনেককে দেখা যায়, যারা প্রেরণায় কোনো অভাব বোধ করেন না, বরং সমাজের আর দশ জনকে প্রেরণা দিয়ে থাকেন, অথচ নিজেরা কিছুই করতে পারেননি।
প্রেরণা মানবজীবনে অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রেরণা আমাদেরকে কোনো কিছু শুরু করার ক্ষেত্রে প্রথম ধাক্কাটি দিয়ে দেয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, প্রেরণার ভূমিকা এই পর্যন্তই। আপনি যদি নিজে দক্ষতা, যোগ্যতা, জ্ঞান ইত্যাদি অর্জন না করেন, তাহলে বাইরের কোনো প্রেরণা আপনাকে বেশি দূর চালাতে পারবে না। অপরপক্ষে, আপনি যদি নিজেই নিজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন, তাহলে আপনার প্রতিটি পরিকল্পনা আপনার কর্মের জন্য প্রেরণা হয়ে দাঁড়াবে।
প্রেরণা কেবল বাতিটিতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়, কিন্তু সেই আগুনকে ধ’রে রাখতে গেলে যা দরকার তা কিন্তু অন্য কিছু। প্রথমত আমাদের যা প্রয়োজন হবে তাকে আমরা বলতে পারি ‘কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনের পথ’ বা ‘Expected Achievement Path’ আপনাকে Tools and Techniques বা কলাকৌশল এবং পদ্ধতিমালা তৈরি করতে শিখতে হবে এবং প্রতিনিয়ত তা Tools and Techniques করতে থাকতে হবে। সুতরাং আসুন আমরা এই Tools and Techniques গুলি সম্পর্কে জানি।
জীবনটা যদি হয় একটি ভ্রমণ তাহলে মনে রাখতে হবে যে, সেই ভ্রমণ সফল ক’রে তোলার জন্য একটি মানচিত্র প্রয়োজন। এবং অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, এই মানচিত্রটি একটি গোপন মানচিত্র। ফলে, আপনাকে তো নিজের জন্য মানচিত্রটি তৈরি করতেই হবে। উপরন্তু, এই মানচিত্রের পুরো তথ্য যেন অন্য কেউ এক সঙ্গে জেনে না যায়, সে ব্যাপারেও আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে হবে।
অর্থাৎ আমরা যা নিয়ে কথা বলছি তা আসলে এমন কোনো বিষয় নয় যা নিয়ে শুধু কথাই বলা যায় বা কথা বললেই তার দায়িত্ব পালন হয়ে যায়। একটি Secret Map বা গোপন মানচিত্র এমন কিছু নয় যা নিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করলে বা কথা বললেই তা তৈরি হয়ে যাবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। শুধু তাই নয়, এই মানচিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে পৃথিবীর সবাই হয়তো অবদান রাখতে পারে, কিন্তু মানচিত্রের মালিক একমাত্র আপনি। এবং এই মালিকানা যদি অন্যের কাছে চ’লে যায়, তাহলে আপনার জীবনের অনন্যতা ব’লে আর কিছুই রইল না এবং এই মানচিত্র যদি আপনি তৈরি না করেন, তাহলে আপনার জীবনে ভ্রমণ ব’লে আর কিছুই রইল না।
একটি গোপন মানচিত্র ছাড়া জীবন চলার পথে যাবতীয় ভ্রমণকে আমরা বলতে পারি যাযাবরের উদ্দেশ্যহীন যাত্রা। তা কাউকেই কোনো লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে না।
আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে: আপনার গোপন মানচিত্রটি একটি পবিত্র বিষয়, কারণ আপনার জীবনে আপনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিয়ষ হলো এই জিনিসটি। যদিও অন্য কারোর জীবনে আপনার মানচিত্রের কোনো গুরুত্ব না-ও থাকে। সুতরাং এই মানচিত্রের সাথে আপনার সম্পর্ক হবে অঙ্গীকারের সম্পর্ক । এবং এই মানচিত্রের প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পথ আপনার জন্য আপনার মহাবিশ্বের একটি বিশেষ স্তর ছাড়া আর কিছুই নয়।
সুতরাং শুরুতেই জেনে নেয়া যাক এই গোপন মানচিত্র তৈরি করতে গেলে আমাদের কী কী লাগবে। যারা সফল ভ্রমণকারী নন, তারা কিন্তু তাদের জীবনের জন্য সঠিক মানচিত্র তৈরি করতে পারেন না। আর ফলে এ কারণেই তারা ব্যর্থ হয়ে থাকেন। সচরাচর আমরা অধিকাংশ ব্যক্তি আমাদের জীবনের জন্য একটি মানচিত্র তৈরি ক’রে থাকি না। কেউ কেউ হয়তো অলিখিতভাবে একটি মানচিত্র তৈরি করেন, কিন্তু তা কখনোই লিখে রাখেন না। কেউ কেউ লিখে রাখলেও তাকে যে প্রতিনিয়ত পরিমার্জন পরিবর্ধন করতে হয় সে ব্যাপারে হয়তো তারা সচেতন থাকেন না। আবার অনেকে এমন রয়েছেন যে, জীবনের এই গোপন মানচিত্রটি কল্পনার মধ্যে আঁকেন বটে, কিন্তু তা কেবল কল্পনার স্তরেই রয়ে যায়, এবং তা তাদেরকে স্বপ্নবিভোর ক’রে দেয়, বাস্তবমুখী আচরণের দিকে ধাবিত করে না।
একজন সফল ভ্রমণকারীকে এই সব ধরনের ত্র“টি থেকে মুক্ত হ’তে হবে এবং জীবনের গোপন মানচিত্রের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করার মাধ্যমে নিজেকে নিজেরই আবিষ্কারের আয়নায় একবার দেখে নিতে হবে। এবং তারপর অঙ্গীকার, নিষ্ঠা, অধ্যবসায়, ইত্যাদির মাধ্যমে সেই মানচিত্র অনুযায়ী জীবন চলাকে সফল ক’রে তুলতে হবে।
No comments:
Post a Comment