ভাষা বদলি করুন

The Only way to stop any pain in your life is to accept the fact that nothing is yours, nothing was yours, and nothing will ever be yours. They are worldly attachments; given by Allah, belonging to Allah and returning beck to Allah.

May 31, 2016

ব্যর্থ না হয়ে সফল হওয়া যায় না

ব্যর্থ না হয়ে সফল হওয়া যায় না:
টিম কুক
(পরিচিতি: টিম কুক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপল ইনকরপোরেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)।  ১৯৯৮ সালের মার্চে তিনি অ্যাপলে যোগ দেন। ২০১০ সালে অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি এ বক্তব্যটি দেন।)
আজকে এখানে তোমাদের সঙ্গে থাকতে পারাটা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানের ও গর্বের বিষয়। এখানে এসে আজ আমার মনে হচ্ছে আমি যেন আমার ঘরে ফিরে এসেছি, যেখানে আমার অনেক সুখস্মৃতি রয়েছে। অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াটা আমার জীবনে একটা চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করেছে। পলো অলটোতে যেই আমার অ্যাপলের অফিসে এসেছে সেই বুঝতে পেরেছে যে এই বিশ্ববিদ্যালয়টা আমার কাছে খুব বড় একটা ব্যাপার। তোমাদের সামনে এখানে আসতে পেরে আমি সত্যিই শিহরিত হচ্ছি। আমি আজ জীবনে যেখানে দাঁড়িয়ে আছি এত দূর আসতে পেরেছি, কারণ আমার মা-বাবা তাঁদের যেটুকু উচিত ছিল তার চেয়েও অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আর স্টিভ জবস ও অ্যাপল আমাকে গত ১২ বছরের বেশি সময় ধরে সত্যিই অর্থবহ কিছু কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। আমি জানি, আমি আজ এমন কিছু মানুষের সামনে কথা বলছি যাঁদের ধ্যানধারণা ও গবেষণা আমাদের জীবনে খুব ইতিবাচক কিছু প্রভাব ফেলবে। তাই এসব কিছু মাথায় রেখে আমি আমার জীবনের কিছু দর্শন তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করব, যা অন্তত আমার ক্ষেত্রে কাজে লেগেছে। এখন পর্যন্ত আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি ছিল অ্যাপলে যোগদান করা। অ্যাপলে কাজ করার কথা কখনো আমার চিন্তাতেই ছিল না কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই এটিই ছিল আমার জীবনে নেওয়া সেরা সিদ্ধান্ত। এ ছাড়া আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আমি আমার জীবনে নিয়েছি যেমন অবার্নে পড়তে আসার সিদ্ধান্তটি। যখন আমি হাইস্কুলে ছিলাম তখন কিছু শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন এখানে পড়তে আর কিছু শিক্ষক বলেছিলেন অ্যালবামায় পড়তে। আমাকে তখন একটা বেছে নিতেই হতো। কিন্তু অ্যাপলে আসার বিষয়টি এ রকম ছিল না। আমি এখানে না এলেও পারতাম। ১৯৯৮ সালে আমি যখন অ্যাপলে আসি, তখন অ্যাপলের কী অবস্থা ছিল তা হয়তো তোমাদের কল্পনারও বাইরে। তখন কোনো আইপ্যাড, আইফোন, আইম্যাক এমনকি আইপডও ছিল না। তখন অ্যাপল কেবল ম্যাক কম্পিউটার বানাত আর বছরের পর বছর ধরে এর বিক্রি কমেই যাচ্ছিল। প্রায় সবাই ধরে নিয়েছিল অ্যাপলের বিলুপ্তি সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমি তখন কাজ করতাম কমপ্যাক কম্পিউটারে, যা ছিল সে সময়ের সবচেয়ে বড় পার্সোনাল কম্পিউটার কোম্পানি। শুধু তাই নয়, এর হেডকোয়ার্টারও ছিল অবার্নের পাশে টেক্সাসে। তাই যেকোনো বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ যারা আমাকে চিনত, তারা খরচ ও অন্যান্য সুবিধার কথা ভেবে কমপ্যাকেই থাকতে বলেছিল। অনেকে এ-ও বলেছিল কমপ্যাক ছেড়ে অ্যাপলে যাওয়া হবে চরম বোকামি। তাই অ্যাপলে আসার সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে আমাকে আমার প্রকৌশলী মনের বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে হয়েছিল। প্রকৌশলীদের বিচার-বিশ্লেষণ করে আবেগহীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে শিক্ষা দেওয়া হয়। যখন কতগুলো বিকল্প আমাদের সামনে আসে তখন আমরা সেগুলোর মধ্যে খরচ ও সুবিধার কথা চিন্তা করি। কিন্তু কিছু সময় আসে যখন কেবল খরচ আর সুযোগসুবিধাকে যেন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঠিক মাপকাঠি বলে মনে হয় না, কিছু সময় আসে যখন আমাদের আবেগের ওপর নির্ভর করাটাকেই সঠিক বলে মনে হয়। এটা এমন কিছু, যা হয়তো আমাদের মাথায় ক্ষণিকের জন্য জন্ম নেয়, আর তুমি যদি তাতে সাড়া দাও তবে এর ক্ষমতা আছে তোমাকে সবচেয়ে ভালো জায়গাটিতে পৌঁছে দেওয়ার। সেই ১৯৯৮ সালে আমি আমার আবেগের ওপরই আস্থা রেখেছিলাম। আমি এখনো জানি না, আমি কেন তা করেছিলাম। কিন্তু স্টিভের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎকারের পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আমি আমার মনের যৌক্তিক অংশটুকু ঝেড়ে ফেলি এবং অ্যাপলে যোগদান করি। আমি যদি সেদিন আমার আবেগ আর অনুমান ক্ষমতার ওপর আস্থা না রাখতাম, আমি জানি না আমি আজ কোথায় থাকতাম, কিন্তু এটুকু নিশ্চিত তোমাদের সামনে আসার সুযোগ অবশ্যই পেতাম না। এটা আমার জন্য একটা চমকপ্রদ শিক্ষা ছিল। আমি ভাবছি যখন আমার সমাবর্তন শেষ হয় তখন আমি জীবন নিয়ে কতটা অনিশ্চয়তায় ছিলাম। জীবন অনেকটা ব্যাটারের মতো, তোমাকে একের পর এক নানা রকম বলের মুখোমুখি হতে হবে। একজন ভালো ব্যাটার জানে না, কখন সে মারার মতো বলটি পাবে, কিন্তু সে জানে একসময় আসবেই। আর তাই যখন সে বলটি পাবে তখন কী করবে তার প্রস্তুতি আগে থেকেই নিতে হয়। তাই জীবনে তুমি কী করবে তার পরিকল্পনা করতে না পারলেও অন্তত তার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখো।

আমার মনে সব সময় অনুরণিত হয় আব্রাহাম লিংকনের উক্তিটি, ‘আমি প্রস্তুত হব, কারণ কোনো একদিন আমার সুযোগ আসবে।’ লিংকনের জন্য যা সত্য, তা ’৮২ তে আমাদের জন্য সত্য ছিল এবং আজ তোমাদের জন্যও সত্য। তাই প্রস্তুত হও, তোমাদের সামনে সুযোগ আসবেই। যদি তুমি প্রস্তুত থাকো এবং তোমার জন্য সঠিক দরজাটি খুলে যায় তখন তোমার কেবল একটি কাজই বাকি। আর তাহলো তোমাকে নিশ্চিত করতে হবে তুমি যা প্রস্তুতি নিয়েছ তার সবটুকুই তুমি কাজে দেখাতে পেরেছ। আমার মনে হয় ব্যর্থতার কথা উল্লেখ না করে সাফল্যের কথা বলা মানে তোমাকে ভুল পথে চালিত করা। আমি এমন কাউকে জানি না, যে কঠিন পরিশ্রম না করে, ব্যর্থ না হয়ে কোনো সাফল্য অর্জন করেছে। তাই এমন ভেবো না যে অতীতের কোনো কিছু ভবিষ্যতে তোমাকে দারুণ কিছু করতে বাধা দেবে। যারা তোমাদের নিজ সামর্থ্য সম্পর্কে সন্দিহান, আমিও একসময় তাদের অবস্থানে ছিলাম। তোমাদের মতো আমাকেও জীবনের বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আসতে হয়েছে। আমার জীবনের এত দূর আসার পর আমার মনে হয় প্রতিটি কঠিন সময় পার করার পর আমি আরও শক্তিশালী, আরও বিচক্ষণ হয়েছি। তাই ব্যর্থতার সম্ভাবনা যেখানে নেই, সেখানে সাফল্যেরও কোনো সম্ভাবনা নেই।

এখন তোমাদের মনে সবচেয়ে সুন্দর স্বপ্নগুলো আঁকো জীবনে যেখানে তোমরা পৌঁছাতে চাও। আর জীবনের ছোটখাটো বাধার মুখে হার মেনো না। অভিনন্দন তোমাদের সবাইকে। এখন তোমাদের সময়। তোমাদের আনন্দগুলোকে তোমাদের চলার পথে ছড়িয়ে দাও। তোমাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ

No comments:

Popular Posts