জন্মের পর একটি ছেলে শিশু যখন কান্না করে তখন তার কান্না থামাতে গিয়ে বলা হয়, “কাঁদে না বাবা কাঁদেনা, ছেলেদের কাঁদতে নেই”। তারপর ছেলে শিশুটি যখন বড় হয়ে সমবয়সীদের সাথে ঝগড়া করে বাড়ি এসে কান্না করে তখন তাকে বলা হয়, “ একদম কাঁদবি না, ছেলেদের কাঁদতে নেই, ছেলেদের মন শক্ত হতে হয়, কান্না কাপুরুষতার লক্ষণ। ”
সেই ছোটবেলা থেকে প্রতিটি ছেলেকে কাঁদতে নিষেধ করা হয়। কারণ ছেলেদের চোখের জলের অনেক মূল্য। আর তাই মেয়েদের হাজারো মায়াকান্নার চেয়ে ছেলেদের ১ ফোঁটা জলের মূল্য অনেক। পরিবারের যদি ছেলেটি ভাই বোনের মাঝে সবার বড় হয়, তাহলে তাকে ছোটবেলা থেকেই এটা বলা হয় যে, “তোকে তাড়াতাড়ি বড় হতে হবে, সংসারের হাল ধরতে হবে, ভাই বোনের সমস্ত দায়িত্ব তোকেই নিতে হবে” বড় হওয়ার সাথে সাথে সেই দায়িত্বের পরিধি বাড়তে থাকে।
আপনি আমি ছেলে হয়ে জন্মেছি এটা কি অপরাধ নাকি?মেয়েরা হয়তো ভাবে ছেলেরা কতো সুখে ই না জীবন কাটায় ! কোনো বিধি-নিষেধ নাই, স্বাধীনভাবে যে যার মতো চলা-ফেরা করে, ঘুরা- ঘুরি করে, আড্ডা দেয় !
তবে শুনে রাখুন,আমি বলবো এটা আপনার চরম ভুল ধারনা !!
ছেলে হয়ে জন্মানো মানে একটা সংগ্রামী জীবনের সূচনা মাত্র।একটা ছেলে যখন মেট্রিক/ইন্টার পরীক্ষায় ফেল করে তখন তাকে পড়ালেখা বাদ দিয়ে সংসারের হাল ধরতে হয়, বেছে নিতে হয় টাকা রোজগারের পথ ! আর একটা মেয়ে? পরীক্ষায় ফেল করলেই তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়!
মেয়ের গায়ের রং একটু ফর্সা হলেই হলো...... তার জন্য অপেক্ষা করছে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,ব্যাংকার আরো কতো মানুষ! আর ছেলে যখন বেকার থাকে তখন তো কথা ই নাই।
প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতি
নিয়ত তাকে লাঞ্চিত হতে হয়। সংসারে তার কথার কোনো মূল্য ই থাকে না।
দুনিয়ার বাবা- মায়ের চেয়ে আপন আর কে আছে? তাদের মুখে ও উঠতে বসতে খোটা শুনতে হয়! টাকা থাকলেই একটা ছেলেকে ছেলে হিসেবে গন্য করা হয়, অন্যথায় সে হিজড়ার চেয়েও অধম! টাকা আছে তো সবকিচ্ছু আছে,টাকা নাই তো কিচ্ছু নাই।
জীবনে একটা ছেলে শুধু দিয়ে ই যায়। বিনিময়ে কিছু চায় ও না. ছেলেরা শুধু
নিঃস্বর্থভাবে ভালোবেসে যায়, কিন্তু বিনিময়ে ভালোবাসা পায় না...
একটা ছেলে কতোটুকু ভালোবাসার যোগ্য
তার মান দন্ড হলো টাকা টাকা এবং শুধু টাকা! ছেলে হয়ে জন্মিয়ে বোধহয় পাপ ই করে ফেললাম।
এবার রিলেশনের ব্যাপারে আসা যাক। ছেলেদের প্রেম করার ক্ষেত্রে তেমন বাঁধা থাকেনা, সে স্বাধীন ঠিক। তবে তারমাঝেও একটা কিন্তু থাকে যা প্রতিটি ছেলের জানা।
টাকা আছে তো গার্লফ্রেন্ড আছে,টাকা নাই তো গার্লফ্রেন্ড ও নাই. গার্লফ্রেন্ডের জন্মদিনের তারিখ ঘনিয়ে আসছে এদিকে সে টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ বহন করে, সংসার চালিয়ে
নিজের তিন বেলার আহার ই জোটাতে পারে না, বার্থডে গিফট দিবে কিভাবে? তাই
সে দুঃখে মোবাইলটা অফ করে রাখে, যেন প্রেমিকার ফোন ধরতে নাহয়।
বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলেদের সৌন্দর্য, চরিত্র বা গুন কে প্রাধান্য দেয়া হয় না, প্রাধান্য
দেয়া হয় তাদের টাকা পয়সা। এই জগৎ ছেলেদের মানুষ মনে করে না। মনে করেটাকার মেশিন!
ছেলেটা যদি টাকা ইনকাম
করে বৌয়ের জন্মদিনে 'ডায়মন্ড ওর্য়াল্ড'
এর হিরের নেকলেস উপহার দেয় তাহলে
বৌয়ের মুখ দিয়ে আদুরে 'জান কত্তো ভালো' এই
কথাটা বের হবে। আর ছেলেটির যদি কোনো
উপার্জন না থাকে তাহলে সেই বৌয়ের মুখ দিয়ে ই 'হতচ্ছাড়া' শব্দটি বের হবে।
জগৎ এ বৌয়ের চেয়ে অমায়িক ভালোবাসা আর কি হতে পারে? টাকা না থাকলে সেই ভালোবাসা ও বেমালুম গায়েব।
ছোটবেলা থেকেই ছেলেরা বাবার কড়া শাসন, মার উপদেশ শুনে বড় হয়। রাগ হল ছেলেদের অলংকার তাদের শক্তি। হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, “যার রাগ যত বেশী সে নীরবে তত বেশী ভালবাসতে পারে” ছেলেদের নীরব ভালোবাসাগুলো কেউ বুঝেনা, উল্টো ভুল বুঝে কষ্ট দেয়। আর সেই ভুলের মাশুল হিসেবে প্রতিটি কণা ছেলেদের চোখের জলধারায় বের হয়ে আসে। আর এই চোখের জলের মূল্য যদি সবাই বুঝতো তাহলে তারা ওরকম করার আগে হাজারবার ভাবতো।
একটি ছেলেকে জন্মের পর থেকেই ত্যাগ করতে হয়। ত্যাগ করতে হয় তার কিছু অনুভূতি, কিছু চাপা আনন্দ, সারাজীবন পড়াশুনা করে চাকরি ক্ষেত্রে গিয়ে ত্যাগ করতে হয় পরিশ্রমের ঘাম। আর ছেলের বউ খারাপ আচরণ করলে নিজের আপন ঘর ত্যাগ করে দিয়ে তার শেষ জীবনের ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম, আর একমাত্র সঙ্গী বলতে থাকে চোখের জল।
পরিশেষে একটা কথায় বলবো, ছেলেরা আল্লাহ্র অপূর্ব সৃষ্টি। আল্লাহ্ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, “পিতার সন্তুষ্টিতে আমার(আল্লাহ্র) সন্তুষ্টি”। একটি ছেলে হয় কারো ভাই,বন্ধু, আর বাবা। আপনাকে বলছি একবার দোষ দেয়ার আগে তোমার বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখো গভীর মায়ার ভালোবাসা খুঁজে পাবে। মেয়েরা তো মায়াবতী। মায়া নিয়ে প্রিয়মানুষটিকে বুঝতে শিখো, বিনময়ে অনেক ভালোবাসা পাবে। আর আমাদেরকে বুঝতে শিখুন, কারণ তাদের ও আপনাদের মতই মন আছে।
No comments:
Post a Comment