জীবনে লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে আপনাকে চিন্তা করতে হবে একান্ত ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে। কীসে আপনি সুখী হবেন? আপনার জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য কী? লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগে সেই পথ সম্পর্কে একটি ধারণা পেতে আপনাকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে। আর সেই পরিকল্পনাই হবে আপনার লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার। পরিকল্পনাগুলোকে ছোট ছোট স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্যে পরিণত করুন, যা হতে পারে বার্ষিক, মাসিক এমনকি দৈনন্দিন জীবনের অংশ! নিজেকে প্রশ্ন করুন, “আজকের দিনশেষে আমার অর্জনের খাতায় কি কি দেখতে চাই?”
প্রতিদিন বিছানায় যাবার আগে অর্জনের খাতায় কি থাকলে আপনি সন্তুষ্টি লাভ করবেন, সেটা জানা থাকলে সহজ হবে আপনার দৈনন্দিন কার্যসূচী তৈরীতে। এটা ‘টু-ডু’ লিষ্ট করার চেয়ে অনেক বেশী কার্যকরী পন্থা। দৈনিক একটি মিশন আপনাকে আপনার পূর্বনির্ধারিত জীবনের লক্ষ্য অর্জনে অগ্রগতি এনে দিবে।
জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে দ্রুত পদ্ধতিগুলো-
মানসিকতা – বড় করে ভাবুন
প্রথমত, আপনাকে একাগ্রচিত্তে ভাবতে হবে। নিজেকে বড় পরিসরে চিন্তা করার অনুমতি দিন, যতটা সম্ভব উচ্চাভিলাষী হিসেবে গড়ে তুলুন নিজেকে। আপনার সামর্থ্য কতটুকু, আপনি কী করতে পারবেন আর কী করতে পারবেন না- সেসব ভেবে নিজের সামর্থ্যকে সীমিত করে ফেলার মাঝে কোনো সার্থকতা নেই। যেহেতু আপনি নিজের সামগ্রিক উন্নয়ণের চেষ্টা করছেন, তাই আপনার কল্পনাশক্তিকে যতটা সম্ভব বড় ও বুনো করুন! আত্মবিশ্বাসের অভাবে আমরা প্রায়ই আমাদের চিন্তাভাবনাকে সীমিত করে ফেলি। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, জীবনের লক্ষ্য অর্জনের পথে সঠিক বা ভুল কিছু নেই। শুধু কল্পনা করুন এমন একটা জগৎকে যেখানে আপনি তা-ই হতে পারবেন, যা আপনি হতে চেয়েছিলেন। জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই এ ধরণের মানসিক অবস্থায় পৌছতে হবে।
লিখে রাখুন যা ভাবছেন
টুকে রাখুন সবকিছু, যা আপনি অর্জন করতে চান এবং যে অর্জন আপনাকে এনে দিবে মানসিক প্রশান্তি। আপনার চিন্তা-চেতনাপ্রসূত সকল সম্ভাবনাকে অবাধে প্রবাহিত হতে দিন; আপনার ভাবনাপ্রসূত সকল ধারণা ও লক্ষ্য নিয়ে প্রয়োজনে একটা বই লিখে ফেলুন। কোনো ধারণা বা লক্ষ্য একটি কল্পিত বিষয় হিসেবেই রয়ে যাবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি সেটাকে কাগজে টুকে রাখছেন। লক্ষ্য অর্জনে এটাই প্রাথমিক মৌলিক পদক্ষেপ।
সংক্ষিপ্ত তালিকা ও অগ্রারাধিকার
যে লক্ষ্য ও ধারণাগুলো আপনার ব্যক্তি-চরিত্রের সাথে মিলে যায় সেগুলোকে নিয়ে ‘শীর্ষ দশের’ একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করুন। তালিকার কোন লক্ষ্যটি আপনাকে সবচেয়ে বেশী আকৃষ্ট করে? ‘মানসিক ও বাহ্যিক’ উভয় ক্ষেত্রেই কোনটির অর্জন আপনাকে সবচেয়ে বেশী সুখী করবে বলে মনে করেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনাকে সাহায্য করবে শীর্ষ দশের তালিকার অগ্রাধিকার নির্ণয়ে। যদিও সময়ের সাথে এটার পরিবর্তন ঘটবে, তবে তা অবশ্যই টুকে রাখবেন। সেজন্যেই, কোনো লক্ষ্য ঠিক করার কিছু সপ্তাহ পর যদি মনে হয় যে এটা হয়তো আপনার জন্য নয়, তখন নতুন কিছু করার চেষ্টা সবসময়ই থাকবে আপনার।
মিশন ও সময়সীমা
আপনার শীর্ষ দশ লক্ষ্যের তালিকা থেকে অর্জনের তালিকায় যোগ করার জন্য সবচেয়ে বেশি পছন্দের তিনটি লক্ষ্য নির্বাচন করুন। প্রতিটা লক্ষ্যে অর্জনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনী সময়সীমা নির্ধারন করুন এবং সেগুলোকে বার্ষিক, মাসিক ও দৈনন্দিন মিশনে অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভাগে ভাগ করুন। এটা আপনাকে প্রতিটি লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাওয়ার পথে সাহায্য করবে। প্রতিটা লক্ষ্য অনুমান করুন এবং ভাবুন যে আপনি প্রতিটা লক্ষ্যে পৌছে গেছেন। এবার লক্ষ্যে পৌঁছতে যে পদক্ষেপগুলো নিতে হয়েছে, তা ভাবতে ভাবতে আবার উলটো পথে চিন্তা করুন। যৌক্তিক একটা ক্রম নিশ্চিত করুন। একেবারেই ঘাবড়ে যাবেন না। যদি প্রতিটা পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে না পারেন, শুধু আপনার মনে মধ্যে একটা প্যাটার্ন তৈরী করুন এবং ধাপগুলোকে নোট করে ফেলুন। এটা আপনাকে সাহায্য করবে আপনার সময়সীমা নির্ধারণে ও সর্বোপরি আপনার মিশনে, যেহেতু আপনি এখন আপনার লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাব্য যাত্রা পথ সম্পর্কে ধারণা রাখেন।
একেবারে একটি করে লক্ষ্য অর্জন করে এগিয়ে যেতে হবে এমন কিন্তু নয়। আপনি আপনার লক্ষ্যগুলোকে একযোগে অর্জন করে এগিয়ে যেতে পারবেন যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি প্রতিটি লক্ষ্যের জন্যে পর্যাপ্ত সময় দেয়ার ব্যাপারে যথেষ্ঠ আন্তরিক ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবেন।
জীবনে লক্ষ্য স্থাপন ও সেগুলো অর্জনে অগ্রগতির জন্যে প্রয়োজন স্ব-বিরোধী বিশ্বাস ও চিন্তাভাবনা থেকে নিজকে মুক্ত রাখা। আপনার ভাগ্য যে আপনার নিয়ন্ত্রণেই আছে সেটি নিজেকে নিশ্চিত থাকুন এবং নিজের ভেতরে আরো বেশী কিছু অর্জন করার তীব্র ইচ্ছাকে গড়ে তুলুন।
এখনকার মতো আপনাকে জানাচ্ছি অশেষ শুভকামনা, আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্য এবং স্বপ্নগুলো পূরণ হোক।
আমাকে ফেসবুকে ফলো করতে চাইলে:
No comments:
Post a Comment