ভাষা বদলি করুন

The Only way to stop any pain in your life is to accept the fact that nothing is yours, nothing was yours, and nothing will ever be yours. They are worldly attachments; given by Allah, belonging to Allah and returning beck to Allah.

June 03, 2016

আমাদের Aim in life হচ্ছে জীবন

পড়াশুনা করেছি কিন্তু স্কুল জীবনে “Aim in life বা জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য” নিয়ে রচনা লিখিনি বা পড়িনি এমন একজনও খুজে পাওয়া যাবেনা। আমরা প্রত্যকেই মুখস্ত কিছু কথা লিখেছি যে, আমি বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই। ডাক্তার হয়ে বিনামূল্যে মানুষের চিকিৎসা করে মানুষের সেবা করতে চাই। কেউবা আবার লিখেছি শিক্ষক হয়ে সমাজকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে চাই। আবার কেউবা লিখেছি ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। কিন্তু একবার চিন্তা করে দেখতো যে ছেলেটা ডাক্তার হতে চেয়েছিল সে আজ হয়ত পড়ছে ইতিহাস বা বাংলা বা ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে। যে ছেলেটা ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিল সে হয়ত আজ পড়ছে প্রানীবিজ্ঞান বা উদ্ভিদবিজ্ঞান নিয়ে বা অন্য যেকোনো বিষয়ে। আর যে ছেলেটা শিক্ষক হতে চেয়েছিল তার হয়তোবা স্কুলের গণ্ডি পেরোনই হয় নাই। আসলে বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। একজনকে যদি দান করে শতজনকে করে বঞ্চিত। আজ তোমার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভিন্ন। এখন আর ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করা বা শিক্ষক হয়ে সমাজকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা তোমার জীবনের উদ্দেশ্য নয়। তোমার দরকার কাড়ি কাড়ি টাকা-পয়সা, অর্থ-বিত্ত-প্রাচুর্য ও প্রভাব-প্রতিপত্তি। তোমার দরকার সমাজের বাহবা। সমাজ তোমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে, তোমাকে দেখে চেয়ারটা ছেড়ে দিবে, সমাজ তোমাকে স্বীকৃতি দিবে তুমি জীবনে সফল(?), সমাজ বলবে তুমি তোমার বাবা-মার মুখ উজ্জ্বল করেছো, এগুলোই হচ্ছে এখন তোমার একমাত্র চাওয়া। আর একটা সুন্দরী রমণীর সাথে প্রেম করা বা বিয়ে করার বাসনা সেটা তো তোমার মনের ভিতরে সবসময়ই কাজ করে। তোমার দরকার বড় বড় সার্টিফিকেট, পি এইচ ডি ডিগ্রী যাতে বিয়ের বাজারে তোমার কদর একটু বেশীই থাকে। তুমি স্বীকার না করলেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এগুলোই যে তোমার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তা তুমি অস্বীকার করতে পারবেনা। হয়ত বলবে এগুলো কে না চায়? হ্যা আমিও জানি এগুলো প্রায় সবাই চায়। তাই তুমিও চাও, মনেপ্রাণে চাও, যেকোনো মূল্যে চাও।

আর তুমি তোমার এই চাওয়াগুলোকে পূরন করার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা সাধনা করে চলেছ। যে তুমি তোমার আরামের ঘুমটুকু ভেঙ্গে ফজরের নামাজটুকু পড়তে পারোনা সেই তুমি পরীক্ষার টেনশনে সারারাত ঘুমাতে পারোনা। কখন কিভাবে ভোর হয়ে যায় তুমি বলতেই পারোনা কিন্তু তোমার পড়া শেষ হয় না আর ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ পড়ারও সময়তো এমনেই হয়না। বই নিয়ে, গ্রুপস্টাডি নিয়ে বন্ধুদের সাথে এতোটাই ব্যস্ত থাক যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্যে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিরিশ মিনিট সময় তোমার হয়না। কারণ তুমি জান যে এবং তোমাকে জানানো হয়েছে যে এই পরীক্ষায় তুমি ভালো করতেই হবে, না করতে পারলে তোমার স্বপ্নগুলো পূরন হবে না। এই পরীক্ষায় ভালো না করতে পারলে তোমার একটা আরাম আয়েশি জীবন, একটা সুন্দর বাড়ি, একটা সুন্দরী নারী এবং একটা সুন্দর গাড়ী পাওয়া হবে না। আর এগুলো না ফেলে তোমার জীবন একেবারে ব্যর্থ। সমাজ তোমাকে ব্যর্থদের কাতারে ফেলে দিবে, সমাজ তোমার কুৎসা করবে, সমাজ বলবে তুমি শেষ, তুমি কোন কাজের না, তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। তাই তুমি পাগলের মত ছুটে চলেছ এসবের পেছনে। কিন্তু তুমি একবার ভাবনি তুমি কিসের পেছনে ছুটছো, কিসের জন্যে ছুটছো। অবশ্য তা ভাবার মত তোমার সময় কোথায়?

মনে করো তুমি পরীক্ষা দিয়ে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছ এবং দুই দিন পরে ডিপার্টমেন্টের টিচার হবে কিন্তু কিছু দিন পরেই তুমি মারা গেলে। এখন বল কি হবে তোমার ওইসব ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট সার্টিফিকেট দিয়ে। কেজির দরে বিক্রি করা ছাড়া আর কোন কাজে আসবেনা। আর কেজির দরে বিক্রি করলেও তো দুই টাকার বেশী হবে না। এখন চিন্তা করো তোমার সারা জীবনের অর্জন তোমার মৃত্যুর সাথে সাথেই দুই টাকা হয়ে গেল বা তারও কম।

মনে করো গুলশানে তোমার একটা বিশাল বাড়ী হল এবং বাড়ীটিতে উঠার একদিন পরেই তুমি মারা গেলে কি হবে তোমার এই বাড়িটার? মনে করো তোমার একটা লাখ টাকা বেতনের একটা চাকরি হল এবং একটা গাড়ী হল এবং তুমি ওই গাড়ীতে করে প্রথম দিন অফিসে যাওয়ার পথেই দুর্ঘটনায় মারা গেলে তখন কি হবে তোমার ওই লাখ টাকার চাকরি আর বিলাসবহুল গাড়ীর? আচ্ছা মনে করো খুব সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে হল এবং বাসর রাতের পরের দিনই তুমি মারা গেলে তখন কি হবে তোমার ওই সুন্দরী স্ত্রীর? এগুলো কি তোমার সাথে কবরে নিয়ে যাবে নাকি? নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা তুমি মারা যাওয়ার পর তোমার ওই ভালোবসার মানুষটিই ভয়ে তোমার সাথে একরাত থাকতেও চাইবেনা। তোমার যে স্ত্রী কখনো তোমাকে ছাড়া একরাত থাকতে পারতোনা তোমার সেই স্ত্রীই বলবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমাকে যেন দাফন করা হয়। এটাই চরম বাস্তবতা এবং এটাই চরম সত্য। একবার ভেবে দেখ তোমার মৃত্যুর সাথে সাথেই তোমার সব বৈষয়িক অর্জন, প্রভাব-প্রতিপত্তি সব কিছু এক মুহূর্তের মধ্যে শূন্য হয়ে যাবে। তোমার অতি কাছের মানুষগুলো চিরদিনের জন্যে তোমার পর হয়ে যাবে। যাদের জন্যে তুমি পৃথিবীতে এতো কিছু করেছো কেউ তোমার সামান্য উপকারে আসবেনা। কেউ তোমাকে বিন্দু পরিমাণ সাহায্য করতে পারবেনা এমনকি তোমার গর্ভধারিণী মাও পর্যন্ত তোমার জন্যে কিছু করতে পারবেনা এক দোয়া করা ছাড়া।

শুধুমাত্র একটা জিনিসই তোমাকে সাহায্য করতে পারবে সেটা হচ্ছে তোমার আমল অর্থাৎ তোমার কৃতকর্ম। আর সেটাকে গুরুত্ব না দিয়েইতো তুমি এসবের পিছনে পাগলের মত ছুটে চলেছ। তাহলে তখন্ তোমার কি অবস্থা হবে একবার ভাব। অবশ্য তোমাকে ভাবতে হবে না কারণ সেটা আল্লাহ্‌ তায়ালাই তোমাকে সতর্ক করার জন্যে পবিত্র কোরআনে বার বার বলে দিয়েছেন। কিন্তু তুমি এতোটাই দুর্ভাগা যে সেই সতর্ক বানীগুলো তোমার কানে পৌঁছায়না বা নিজে জানারও প্রয়োজনবোধটুকু করোনা।

No comments:

Popular Posts